Skip to main content

Posts

Showing posts from October, 2020

প্রচ্ছদ ( অক্টোবর, ২০২০ )

  সকলের আশীর্বাদ এবং সহযোগিতাকে সঙ্গে নিয়ে প্রকাশিত হলো বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনীর উদ্যোগে পদচিহ্ন সাহিত্য পত্রিকা ( তারাশঙ্কর সাহিত্যসভার মুখপত্র )  ম্যাগাজিনটি পড়ার নিয়মাবলী - ১| সম্পূর্ণ ম্যাগাজিনটি পড়তে ক্লিক করুন বামদিকের উপরে থাকা " Home " সুইচ এ । তারপর আপনারা একটি একটি করে দেখতে পাবেন এবারের সংখ্যার পোস্ট গুলি । যে লেখাটি পড়তে চান " Read more " বাটনে ক্লিক করলে সবটা পড়তে পারবেন। ২|  পড়ার পর নিজের অভিজ্ঞতা জানান নিচে কমেন্ট বক্সে । আর " Share " বাটন এ ক্লিক করে লিংক কপি করে নিয়ে নিজের মত করে এই ম্যাগাজিনটি সবাইকে পড়তে সুযোগ করে দিন। ৩|      এই ম্যাগাজিনের সমস্ত পোস্টের কপিরাইট তারাশঙ্কর সাহিত্যসভা এবং লেখকের নামে রেজিস্টার্ড । বিনা অনুমতিতে এই ম্যাগাজিনের কোনো লেখা ব্যবহার বারন । ( Copyright act 2019-20 )        ধন্যবাদান্তে - ডঃ উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ( সম্পাদক , বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনী ) , সুনীল পাল ( সভাপতি , তারাশঙ্কর সাহিত্যসভা ) , অর্ঘ্য মুখার্জ্জী ( সম্পাদক, তারাশঙ্কর সাহিত্যসভা )

তারাশঙ্কর -কমলাকান্ত পাঠক

 ( পদচিহ্ন-এর প্রথম সংখ‍্যায় কলকাতায় তারাশঙ্করের ৫০তম জন্মদিন উদযাপনের একটি বিবরণ প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল যে কলকাতার সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তারাশঙ্করের সহপাঠী বন্ধু কবি কমলাকান্ত পাঠক স্বরচিত একটি কবিতা পাঠ করেছিলেন। কবিতাটি শুনে তারাশঙ্কর সহ অনেকের চোখেই জল এসে গিয়েছিল। এখানে সেই কবিতাটির পূর্ণপাঠ দেওয়া হলো। স্বভাবতই কবিতাটির কোন শিরোনাম ছিল না। এই শিরোনামটি আমার দেওয়া। -- সুনীল পাল। ) গুরু গরবের ধন আমাদের -- ওগো তারাশঙ্কর, জন্মবর্ষ-স্মরণোৎসবে তব -- স্নেহ-শ্রদ্ধার চন্দনদ্রবে-মাখানো আমার প্রণতি তোমারে নিবেদি যুগ্মকর। আমি আসিয়াছি -- গোকুলের দূত শতধা-শীর্ণ বৃন্দারণ‍্য হতে -- আসিয়াছি আমি -- তব কৈশোর-লীলানিকেতন বনের বার্তা ব'য়ে ; মনের কথাটি তার -- অঞ্চলে নিধি -- পঞ্চাশোর্ধ্বে ফিরিয়া পাইবে, -- বাসনা চমৎকার ! জানে, -- রাজা আসি রাখালিয়া-খেলা খেলিতে পারে না বনে, কিন্তু বাধা কি বাসনা জাগিতে মনে ! আজি রাজসমারোহে -- পুত্রগরবে স্ফীতবক্ষের বিগলিত ক্ষীরধারে বিরহের মধুবেদনার কালি মথিয়া যতনে জননী যশোদা তব কাজর করিয়া পাঠায়ে দিয়েছে হেথা ; বাসনার সাথে পূত স্নেহাশ্রু মিশায়ে দিয়েছে দ‌ই-হলুদে...

পশুবলি - জয়ন্তী মুখার্জি

 সেই রামায়ণের যুগ থেকে চলে আসছে নারীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। সীতাকে লঙ্কাধিপতি রাবণ  হরণ করেছিল ছলনার আশ্রয় নিয়ে ।  তাই রাম রাবণের যুদ্ধ হলো ।। লঙ্কেশকে  পরাজয় করে সীতা উদ্ধার হলো। ফলস্বরূপ সোনার লঙ্কা ছারখার হয়ে গেছিল।। হাসিখুশি সীতামাতা তো অযোধ্যায় ফিরলেন । কিন্তু শেষরক্ষা কি হলো ? ঘরে এসেও সীতামাতাকে শুচিতার পরীক্ষা দিতে হয়েছিল, "অগ্নি পরীক্ষা"। হায়রে নারী !!! নীরবে সীতামাতা মেনেও নিলেন। রাজনন্দিনী হয়েও তিনি ছিলেন জনম- দুঃখিনী।।  কিন্তু দ্রৌপদী !! কৌরবসভায় যেদিন পঞ্চস্বামী ও কৌরব পক্ষের তাবড় তাবড় রাজপুরুষদের চোখের সামনে দুঃশাসন তার কেশাকর্ষণ করে রাজসভায় নিয়ে এসেছিল সেদিন সকলে নতমস্তকে বসে সেই অসহায় রাজবালার হয়ে  প্রতিবাদের একটি শব্দ  উচ্চারণ করেননি। কেন ? সেই  ভয়ংকর পরিস্হিতির ঘটনা সর্বজনের সামনে ঘটেছিল। ফল কি হয়েছিল !! কুরুক্ষেত্র কৌরবদের রক্তে লাল হয়ে গেছিল‌। নারীর এই অপমানের মহাভারত রচনার কাল আমরা পার হয়ে এসেছি , সময় পাল্টেছে কিন্তু নারীকে লাঞ্ছনা করার প্রবৃত্তি এখনো রয়ে গেছে।। আজ আমার সেই বিহারের প্রত্যন্ত গ্ৰামের ম...

মেঘমল্লার- পরিমল চট্টোপাধ্যায়

কিছুটা সময় কেটে গেছে অমলতাস কৃষ্ণচূড়াদের মাঝে। পাশ দিয়ে চলে গেছে পথ হেঁটে আসছে স্মৃতি সেই ঘাসবিহীন পথে। জোনাকির মতো জ্বলছে সেই হাত-রাখা দুপুরগুলো।  এখন এই শ্রাবণনন্দিত হরিৎময়তায় ঘাসের ভিতর জন্মেছে ছত্রাক,  বাতাসে মেঘমল্লার দৃষ্টি-ঝাপসা- করা জলে মিশে যাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। মাঝে মাঝে গজিয়ে উঠছে বাবলাগাছের চারা। আকাশ কতটা ভারি,জানি না। এখানে ঘরের ভিতর আকাশ নেই, এখানে ব্যথা আর জ্বরের ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে বেড়াচ্ছে অস্থির প্যারাসিটামল |

আলোর ঠিকানা - জ্ঞানেন্দ্র মোহন ঘোষ

বেঁচে থাকা মানে  নীল আকাশ সবুজ দিগন্ত ভোরের ঝিরিঝিরি বাতাস  শিশির ভেজা  শিউলি সকাল পাখির কূজন আকাশ ভরা তারা শোহিনী চাঁদ  ঝম্ ঝম্ বৃষ্টি  বৃষ্টি ভেজা রোদ্দুর।  বেঁচে থাকা মানে  জোনাক জ্বলা রাতে  ঝুপ ঝুপ আঁধারে পথ চলা পথের পাশে  কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া  বাউলের একতারা। বেঁচে থাকা মানে  অনন্ত সম্ভাবনা বেঁচে থাকা মানে  আলোর ঠিকানা। 

আগুন --- অনন্য বন্দ্যোপাধ্যায়

  কিভাবে আগুন জ্বলে ওঠে  কিভাবে আগুন নিভে যায়  এসব ভাবতে ভাবতেই অনেক সময় কেটে গেছে । আবার একটা যুদ্ধ মানে আবার নতুন প্রতিশ্রুতিমালা  আবার পায়ে পায়ে ধুলোর অনন্ত ঘূর্ণন  আবার শব্দে শব্দে মুখরিত আকাশ বাতাস । কিভাবে আগুন জ্বলে ওঠে  কিভাবে আগুন নিভে যায়  এসব দেখতে দেখতেই অনেক সময় কেটে যাবে আরও ।

অসমর্থ - অর্ঘ্য মুখার্জ্জী

জীবন সায়াহ্নে একলা বসে কবি ভাবেন একাকী হয়ে নিশ্চুপ -- কী করলাম, করলামই বা কার তরে একাকী এসেছি ভবে, একাকীই তো যেতে হবে। তাহলে কি পুরোটাই কর্তব্য ? নাকি সমাজ, নিয়ম, কামনা, বাসনা, লোভ ... আমার মধ্যে আমি আজ গেছি হারিয়ে নিজের হাতে কেড়েছি তার অস্তিত্বটুকু অজান্তে সামর্থ্যহীন , কর্তৃত্বহীন পড়ে আছে অবয়ব শুধু জীবনের সংজ্ঞা মেলাতে হই অক্ষম, অসমর্থ ।

মায়াবী দুপুর - সারদামণি মণ্ডল

 ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ধারা পাশে খোলা জানালা,  সজন বিনা কাটে কি এই শ্রাবণ !  ঘন মেঘে ছেয়েছে আকাশ  মাঝে মাঝে আলোর আভাস, যেন মুক্তো পরে সেজেছে কচুবন। অবিরত ঝরছে ধারা থমকে গেছে গাছপালা,  তবুও লিখতে পারি না কবিতা । ক্রমাগত বাড়ে বৃষ্টির দাপট  পাখিরা খোঁজে আশ্রয়, মনে উঁকি মারে হাজারো ব্যথা । বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ  বাতাসের শোঁ শোঁ সুর, মনের মাঠে বসেছে আক্ষেপের মেলা । বৃষ্টিস্নাত চারপাশ ভিজে গেছে পোড়া মন, সব মিলে মায়াবী এ দুপুর বেলা । 'কবি'র স্রষ্টার জন্মমাস মনের ক্ষেতে তারই চাষ, "ভালোবেসে মিটলো না সাধ কুলালো না এ জীবনে "। মায়াময় এ পরিবেশে মন যে চায় আরো ভিজতে,  "হায় জীবন এত ছোট ক্যানে এ ভুবনে " ।

আমি আছি —মালা সিংহ

 বেলা পড়ে আসে— যখন আঁধার ঘনায় তরুপল্লবে, রিক্তের বেদন ঝিঁঝিঁর ডাকে, ম্লান দৃষ্টিতে—একা মনে হয়  সম্প্রতি পথ চলতে। প্রশ্ন ওঠে—“কে আমি ?” পৃথিবীর স্পন্দন অনুভব করছি— আমি তিলে তিলে সাধ নিই, আমি আছি—আমার কামনা-বাসনা নিয়ে  পৃথিবীর একান্তে। ইদানীং মৃত মানুষের মত  বিস্ময়ে ক্ষত-বিক্ষত আমার মানসিকতা ! আমার মস্তিষ্কের কোষে কোষে  কুটিল ক্রোধ ! আমি পিছনে,অনেক পিছনে পড়ে আছি। চোখ মেলে চাই পৃথিবীকে— প্রাঙ্গণের একান্তে  আমি আছি।

লুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতি ভাঁজো ঃ----প্রসঙ্গ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও হাঁসুলী বাঁকের উপকথা - চাঁদ রায়

 মহিলাদের কৃষি ব্রতের অঙ্গ স্বরূপ Fertility Cult-এর অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে ভাঁজো ব্রত। পল্লী বাংলার জীবনসংগীত বলা যেতে পারে এই ব্রতোৎসবকে। ভাঁজোকে স্থানভেদে 'ভাজুই', 'ভাজৈ' কিংবা 'ভাজ' বলা হয়ে থাকে। শিল্পগুরু অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর একে "শোস্  পাতার ব্রত" বলে আখ্যায়িত করেছেন। ভাঁজো বাঙালি হিন্দুদের একটি ব্রতাচারমূলক সারি নৃত্য। এই ভাঁজো উৎসবটি প্রাগার্য কোনো এক অনুষ্ঠান যা অস্ট্রিক গোষ্ঠীর  ভাষার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। তবু এর উপর  আর্য প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। বৈদিক দেবতা ইন্দ্রের সঙ্গে সঙ্করায়ন করা হয়েছে। M. N. Srinivas-এর মতে, "এটি সংস্কৃতায়ন (SANSKRITIZATION) করা হয়েছে। ডঃ সুকুমার সেন মনে করেন---" প্রাচীন ইন্দ্রধ্বজ উৎসব ভাঁজো বা ভাজুই'-এর সঙ্গে মিশে গেছে। আমরা সেই মিশ্র বা সংকর রূপটিই দেখে আসছি বাল্যকাল থেকে। তবে একথা সত্য যে, লৌকিক দেবদেবীর পূজা প্রচলন করেছিলেন অস্ট্রিক জাতির মানুষেরা। আর সেই সূত্র ধরে বলা যায়, 'ভাঁজো' এই লৌকিক দেবীর মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন রাঢ় বঙ্গ তথা বীরভূমের গণমানুষ। এই ব্রতোৎসব লোকছড়া ও লোকসংগীতের উৎস। ভাঁজোতল...

তারাশঙ্কর কেন টানে আমাকে - পার্থ প্রদীপ সিংহ

 আমার সৌভাগ্য আমার শৈশব কৈশোর কেটেছে ভালাষ গ্রামে। আমি গর্ব অনুভব করি বিপ্লবতীর্থ ভালাষ গ্রাম আমার জন্মভূমি। গ্রামটি সারাবছর যাত্রা নাটক কৃষ্ণযাত্রা বাউল কবিগান ভাদুগান মনসামঙ্গলগান ভাঁজো বোলান ফকিরিগানে জমজমাট থাকত। আমার বাড়ির সামনের বাড়িতে প্রতি সন্ধ্যায় বসত কৃষ্ণযাত্রা চর্চার আসর। কৃষ্ণযাত্রার মায়াবী সুর আমার পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটাত বারবার। সুযোগ  পেলেই চলে যেতাম সেখানে। বাড়ির পাশেই স্কুল - সেখানে  নিয়মিত  যাত্রার রিহার্সাল হতো। গ্রামে আসত সাপের খেলা, বাঁদরনাচ, পটের গান, ভালুকনাচ, পুতুলনাচ, বহুরূপী। মাঝেমাঝেই বসত রামযাত্রার আসর। দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির পাশে স্কুলেই চলত সে গান । কাজেই আমার পড়াশোনায় প্রায় পড়তো ফাঁকি। মন চলে যেত রামযাত্রায়। দিনের আলোয় অবাক বিস্ময়ে দেখতাম রাম সীতা রাবণদের একসাথে গল্প করতে। এমন পরিবেশে বড় হতে হতে এইসব লোকসংস্কৃতি আমার সারা অঙ্গে বাসা বেঁধেছে। দাদাদের সঙ্গে ছোট থেকে আমিও ঢুকেছি নাটকে । এর প্রধান দায় গ্রামের মাটির। তারপর যখন তারাশঙ্কর পড়লাম - দেখলাম আমার দেখা চরিত্রের ভীড় তারাশঙ্কর সাহিত্য জুড়ে। মতিলালের সং তো গ্রামে দেখেছি শিবপুজোতে, নিতাই কবি...

মেঠো ঘ্রাণ - ভবতারণ মণ্ডল

 সুখফুলি শিহরণে ভাসে চরাচর মেঠোঘ্রাণে মুখরিত আলপথ রাঙা,  হরিৎ বরণী ক্ষেত সতত ঊষর দুধ ফুলি উতরোলে দ্রুত পথ ভাঙা।  দুধবতী ধান মেয়ে সুখেতে কাতর তৃষাতুর দুটি চোখে সবই উশুল,  নাসিকায় ভেসে আসে খুশির আতর ইশারায় ফিসফিস বুনো ঘাসফুল।  ধান মেয়ে চিঠি লেখে মনোময়ী সুখে সবুজের সমারোহে লেখে গীতিমালা, সুখ যেন নদী হয়ে ঢেউ তোলে বুকে প্রহর লহরী গুনি প্রেম প্রীতি ঢালা।  উৎসবে মাতোয়ারা ঢুলু ঢুলু আঁখি রাত ভর গীত হলো শিশিরের গান,  দেখে শুনে মেতে ওঠে মন খুশি পাখি চিকচিকে সোনা সুখ নাকে মেঠোঘ্রাণ। 

চাষী বৌয়ের ব্যথা - গৌর গোপাল পাল

 শরৎ মেঘে ভাসিয়ে ভেলা মেঘ পরীদের দল ! মনের সুখে ভাসিয়ে ভেলা বড়ই যে চঞ্চল !! সাদা মেঘের পেঁজা তুলোয় সূয্যি মামার উঁকি ! মেঘ বালারা ফেরে কুলোয় নেই সে কোন ঝুঁকি !! নদীর পাড়ে রজত কাশে হাওয়ার দোলা লেগে ! সবুজ ধানের মেঠো বাসে মনটা ওঠে জেগে !! চাষী বৌয়ের ভাবনা বাড়ে নদী-ই বাড়ে জল ! অভাব বুঝি ঘর না ছাড়ে মন সদা চঞ্চল !!

ভাঙ্গা আয়নায় প্রতিবিম্ব - সোমনাথ সিংহ রায়

 দ্যুতিময় চারমিনারের প্যাকেট থেকে শেষ সিগারেটটা বার করে ধরাতে গিয়ে আয়নায় নিজেকে একবার দেখলো। ওর শালপ্রাংশু দেহটা ভাঙ্গা আয়নায় কেমন যেন ভাঙাচোরা লাগছে। ঘরের আলো নিভিয়ে রেখেছে দ্যুতিময়। পুরোনো আমলের খড়খড়ি লাগানো বড় জানালাটা হাট করে খোলা। রাস্তার ওপারে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে দোতলার এই ঘরটা একটা আলো আধাঁরির পরিবেশ তৈরি করেছে। আড়াআড়ি ভাবে আয়নায় পড়া আলোয় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে দ্যুতিময় ফিরে গেল প্রায় অর্ধশত বছর আগে। তখন ও কলেজে পড়ে আর  ছাত্র রাজনীতি করে। প্রকাশ্যে নয় গোপনে। ধরা পড়লে ছবি হয়ে যেতে হবে। একবার প্রায় ধরা পড়ে যেতে যেতে উপস্থিত বুদ্ধির জোরে বেঁচে যায়। তখন সন্ধ্যের পর রাস্তার বাতি জ্বললে এমনই একটা আলো আঁধারের পরিবেশ সৃষ্টি হতো। না জ্বললে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সময়টা সাত-এর দশক।  সিগারেটের খালি প্যাকেটটা দুমড়ে মুচড়ে পেটো ছোঁড়ার ভঙ্গিমায় ছুঁড়ে মারলো যাতে জানালার গরাদের ফাঁক দিয়ে রাস্তায় গিয়ে পড়ে। ছোঁড়াটা একটু জোরে হয়ে গেলো। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গরাদে  লেগে ফিরে এলো ওর পায়ের কাছে। আবার চেষ্টা করলো এবার সময় নিয়ে লক্ষ্য স্থির করে, কি...

নজরুলের কবিতায় পুরাণ ও মিথ ঐতিহ্যের ব্যবহার (প্রসঙ্গ ঃ 'বিদ্রোহী') ----বিষ্ণুপদ চৌধুরী

 পুরাণ ও মিথকে আশ্রয় করে সাহিত্য সৃষ্টি শুধু বাংলা সাহিত্যেই নয়, সমগ্র বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে তা দৃষ্ট। বলা বাহুল্য,  সাহিত্যের অন্যান্য শাখার চাইতে কবিতাতেই এই পৌরাণিক অনুষঙ্গ ও মিথের ব্যবহার বেশি। বাংলা সাহিত্যও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলা কবিতার ক্ষেত্রেও আমরা দেখি পৌরাণিক নানান অনুষঙ্গকে কবিরা ব্যবহার করছেন।     আমরা আজ আলোচনা করব নজরুলের কবিতায় পুরাণ ও মিথ ঐতিহ্যের মেলবন্ধন কিভাবে তাঁর কবিতাকে সামগ্রিকতা দান করেছে। নজরুল তাঁর অনেক কবিতাতেই এই পৌরাণিক অনুষঙ্গ ও মিথকে এক নতুন ভাবে রূপদান করেছেন।  তিনি পুরাণের প্রাচীন ঐতিহ্যকে আধুনিক পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর কবিতায় স্থাপন করতে চেয়েছেন। বলা যেতে পারে,  পৌরাণিক অনুষঙ্গ ও মিথের ব্যবহার তাঁর কবিতায় অত্যন্ত সাবলীলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।  তিনি হিন্দু,  মুসলিম,  গ্রীক প্রভৃতি পুরাণ ও মিথ ঐতিহ্য কবিতায় এক নতুনভাবে ব্যবহার করেছেন। আমরা সেগুলোই এখন আলোচনা করে দেখে নেবো।        নজরুলের কবিতায় পুরাণ ও মিথ ঐতিহ্যের ব্যবহারকে আমরা কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করে নেবো। ১। ভারতীয় মিথ-পুরাণের ব্যবহার। ২। বা...

অনলাইন পরীক্ষা বনাম অনলাইন শপিং ©নন্দিতা মিশ্র

 আজ কৃষ্ণা নবমী, দেবীর বোধন... দেবীর আবাহন গীতি বেজে চলেছে দিক হতে দিগন্তে। মিমির বাড়িতে ঘটে মা দুর্গার অধিষ্ঠান হয়ে গেল আজই। প্রকৃতি আপন ছন্দে নিজের সাবলীল গতিতে চলেছে। এবার একটু অন্য রকম পুজো। মহালয়ার এক মাস চার দিন পর ষষ্ঠীর বোধনে ঢাকে কাঠি পড়বে। এবারে মলমাস পড়েছে তাই আশ্বিন মাসে পুজো হবে না।  অন্যরকম অন্য ভাবেও... জগৎ জুড়ে বিপর্যয়। কোভিড পজিটিভের ঘটনা বাড়ছে প্রতিদিন। কাল ছিয়ানব্বই হাজার পজিটিভ কেস হয়েছে। বাইরে বের হওয়ার স্বাভাবিক গতি রদ হয়েছে সবার। মিমির এতদিনে দিল্লিতে থাকার কথা, এখন ঘরে বন্দি।  আজ লকডাউন। সকাল থেকেই মিমি তাই বিছানা ছাড়েনি।  তাঁর মা এসে বার কয়েক ডাকল, কিন্তু সে যেন শুনতেই পায়নি। কাল রাতেই ইউ জি সি অক্টোবর মাসে পরীক্ষার আবেদন মেনে নিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে পরীক্ষা হয়, এ বিষয়ে গুচ্ছ নির্দেশিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরাফেরা করছে।  চা টা খেয়েই মিমি ঠিক করে ফেলল, আজকেও দিনটা মুক্তির আস্বাদ নেবে। সারাদিন মোবাইলে কুটকুট করে গেল। মিমি মাকে জানতে চাইল, 'মা ! প্রশ্নের উত্তরগুলো কী এখনই রেডি করে রাখব ? না সেদিন প্রশ্ন পেয়েই করা যাবে।'  'অবশ্যই ন...

জন্মদিন - ধ্রুবজ‍্যোতি মিশ্র

 বছরের সেই দিনটি সবার খুব প্রিয় হয়, যেদিন সে মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে এসে এই পৃথিবীর আলো দেখেছিল। সবাই কতো আনন্দই না করে ---বন্ধুদেরকে নিয়ে কেউ হইহুল্লোড় করে, কেউ পার্টি দেয়, আবার পথের পাশে পড়ে থাকা শিশুটা মায়ের হাতের এক চামচ পায়েস খেয়েই খুশি হয়। তবে আজ যে জন্মদিনের কথাটা আমি সবার সাথে ভাগ করে নেব সেটা একটু আলাদা। এই জন্মদিন আনন্দের, নাকি দুঃখের, নাকি বিরহের, নাকি জীবনের চরম ভালোবাসার ! সেটা পাঠকবর্গ না হয় বিচার করে নেবেন। ঘটনার সূত্রপাত আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগের, চাকরি সূত্রে তখন আমি কলকাতায়।আমার পাশের বাড়িতে থাকতো তমালদা ও তাঁর সদ্য বিবাহিত গিন্নি কাবেরী। তমালদা চাকরি করতো ইন্ডিয়ান আর্মিতে, বাড়িতে তমালদার স্ত্রী কাবেরী একাই থাকতো, প্রতিবছর মাস দুইয়ের জন্য তমালদা ছুটি নিয়ে আসত। কখনো পুজোর সময় তো কখনো শীতে। বাড়িতে একা থাকতে থাকতে নিজেকে অসহায় বোধ করত কাবেরী বৌদি আর তাই নিজের পড়াশোনার সার্টিফিকেটগুলোকে হাতিয়ার করে কলকাতার একটি নামকরা অফিসে অফিসার পোস্টে জয়েন করে। সেবার পুজোর সময় তমালদা যখন বাড়ি ফিরল বাড়িতে আনন্দের শেষ নেই, হই-হুল্লোড় লেগে আছে। কখনো বন্ধুদেরকে ...