Skip to main content

তারাশঙ্কর কেন টানে আমাকে - পার্থ প্রদীপ সিংহ

 আমার সৌভাগ্য আমার শৈশব কৈশোর কেটেছে ভালাষ গ্রামে। আমি গর্ব অনুভব করি বিপ্লবতীর্থ ভালাষ গ্রাম আমার জন্মভূমি। গ্রামটি সারাবছর যাত্রা নাটক কৃষ্ণযাত্রা বাউল কবিগান ভাদুগান মনসামঙ্গলগান ভাঁজো বোলান ফকিরিগানে জমজমাট থাকত।

আমার বাড়ির সামনের বাড়িতে প্রতি সন্ধ্যায় বসত কৃষ্ণযাত্রা চর্চার আসর। কৃষ্ণযাত্রার মায়াবী সুর আমার পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটাত বারবার। সুযোগ  পেলেই চলে যেতাম সেখানে। বাড়ির পাশেই স্কুল - সেখানে  নিয়মিত  যাত্রার রিহার্সাল হতো।

গ্রামে আসত সাপের খেলা, বাঁদরনাচ, পটের গান, ভালুকনাচ, পুতুলনাচ, বহুরূপী। মাঝেমাঝেই বসত রামযাত্রার আসর। দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির পাশে স্কুলেই চলত সে গান । কাজেই আমার পড়াশোনায় প্রায় পড়তো ফাঁকি। মন চলে যেত রামযাত্রায়। দিনের আলোয় অবাক বিস্ময়ে দেখতাম রাম সীতা রাবণদের একসাথে গল্প করতে।

এমন পরিবেশে বড় হতে হতে এইসব লোকসংস্কৃতি আমার সারা অঙ্গে বাসা বেঁধেছে। দাদাদের সঙ্গে ছোট থেকে আমিও ঢুকেছি নাটকে । এর প্রধান দায় গ্রামের মাটির। তারপর যখন তারাশঙ্কর পড়লাম - দেখলাম আমার দেখা চরিত্রের ভীড় তারাশঙ্কর সাহিত্য জুড়ে। মতিলালের সং তো গ্রামে দেখেছি শিবপুজোতে, নিতাই কবিয়ালের গান শুনেছি সারারাত মাটিতে বসে। কামধেনুর নাথুই তো আমাদের বাড়িতে আসত গোমঙ্গল গান শোনাতে। আমার মনে হলো এইসব চরিত্রের অভিনয় আমি পারব। তখন সবে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েছি ; শুরু করলাম তারাশঙ্করের ছোটগল্প ডাকহরকরার নাট্যরূপ দিতে। সে এক গলদঘর্ম অবস্থা। অনেক চেষ্টায় যেন নাটকের মতো দাঁড়ালো। গ্রামের ছেলেমেয়েদের নিয়েই শুরু হলো তারাশঙ্করের নাটক করা। নাটক দেখে গ্রামের মানুষ মন্দ বলে নাই।

পরিচিত চরিত্র, পরিচিত স্থান, পরিচিত ভাষা, পরিচিত সংস্কৃতি, লোকাচার, বিষয়-বৈচিত্র‍্য‍, অসংখ্য বৈচিত্র্যময় মানুষের মিছিল, গল্পে নাটকীয় উপাদান এবং অবশ্য সমাজ জাগরণের দিশা। সবগুলো পরিচিত হওয়ায় খুব সহজেই চরিত্রে প্রবেশ করে নাটকে রূপ দিতে পারি। অনেকেই বলেন নাটকে ভাষা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার মনে হয়  তারাশঙ্করকে ধরতে গেলে তারাশঙ্করের ভাষাকে ধরা উচিত। উনি যেভাবে তাঁর সাহিত্যে আমাদের বীরভূমের লোকভাষাকে সংরক্ষণ করে গেছেন - তার সম্মান জানানো আমাদের উচিত।

সততা, কর্মসংস্কৃতি, আধুনিক সমাজভাবনা, পুরাতনকে সম্মান জানিয়ে নতুনকে গ্রহণ করতে শেখায় তারাশঙ্কর।  

তারাশঙ্করের সমাজভাবনা যদি সমাজকে একটুও ভাবিত করে এবং সে কাজে যদি আমাদের রামায়ণের কাঠবিড়ালির মতো কোনো অংশগ্রহণ থেকে থাকে তবে নিজেকে ধন্য মনে করব।

Comments

Popular posts from this blog

নজরুলের কবিতায় পুরাণ ও মিথ ঐতিহ্যের ব্যবহার (প্রসঙ্গ ঃ 'বিদ্রোহী') ----বিষ্ণুপদ চৌধুরী

 পুরাণ ও মিথকে আশ্রয় করে সাহিত্য সৃষ্টি শুধু বাংলা সাহিত্যেই নয়, সমগ্র বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে তা দৃষ্ট। বলা বাহুল্য,  সাহিত্যের অন্যান্য শাখার চাইতে কবিতাতেই এই পৌরাণিক অনুষঙ্গ ও মিথের ব্যবহার বেশি। বাংলা সাহিত্যও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলা কবিতার ক্ষেত্রেও আমরা দেখি পৌরাণিক নানান অনুষঙ্গকে কবিরা ব্যবহার করছেন।     আমরা আজ আলোচনা করব নজরুলের কবিতায় পুরাণ ও মিথ ঐতিহ্যের মেলবন্ধন কিভাবে তাঁর কবিতাকে সামগ্রিকতা দান করেছে। নজরুল তাঁর অনেক কবিতাতেই এই পৌরাণিক অনুষঙ্গ ও মিথকে এক নতুন ভাবে রূপদান করেছেন।  তিনি পুরাণের প্রাচীন ঐতিহ্যকে আধুনিক পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর কবিতায় স্থাপন করতে চেয়েছেন। বলা যেতে পারে,  পৌরাণিক অনুষঙ্গ ও মিথের ব্যবহার তাঁর কবিতায় অত্যন্ত সাবলীলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।  তিনি হিন্দু,  মুসলিম,  গ্রীক প্রভৃতি পুরাণ ও মিথ ঐতিহ্য কবিতায় এক নতুনভাবে ব্যবহার করেছেন। আমরা সেগুলোই এখন আলোচনা করে দেখে নেবো।        নজরুলের কবিতায় পুরাণ ও মিথ ঐতিহ্যের ব্যবহারকে আমরা কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করে নেবো। ১। ভারতীয় মিথ-পুরাণের ব্যবহার। ২। বা...

শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার কিছু স্মৃতি কথা : তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় স্মরণে - দীপান্বিতা মন্ডল

কবে থেকে যে সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখার অনুরাগী পাঠিকা হয়ে পড়েছিলাম আজ আর মনে পড়ে না । সেই কোন ছোট্টোবেলা থেকে বাপির মুখে ওঁর নাম অসংখ্যবার শুনেছি নানা কারনে । বাপিরও প্রিয় সাহিত্যিক ছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় - বাপির কাছেই প্রথম শুনেছিলাম " হাঁসুলি বাঁকের উপকথা"র কাহিনী । বাপিদের ছাত্রাবস্থায় ঐ উপন্যাস প্রকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গেই সারা বাংলায় কিভাবে তিনি আপামর বাঙালী পাঠকদের কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন শুনতাম সে গল্পও । রাঙামাটির রস রঙ রূপ গন্ধ বর্ণ , স্থানীয় খেটে খাওয়া মানুষদের অকৃত্রিম জীবনের ছবি এঁকে বাংলা সাহিত্যে যে নতুন মণিমানিক্যের ভান্ডারটি সৃষ্টি করলেন তার হদিস প্রথম পেয়েছিলাম বাপির কাছ থেকেই। গল্প শুনতাম যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় বাপিরা বন্ধুরা মিলে তাঁর টালা পার্কের বাড়ীতে ছুটির দিনে ছুটত নতুন গল্পের স্বাদ নিতে নয়ত তাঁর কোন গল্পের ওপর ভিত্তি করে উত্তম সুচিত্রার পরের ছবিটা হতে চলেছে তার কাহিনী শুনতে । তাঁর প্রতি এ হেন ভালোবাসাই পরবর্তীকালে আমার মধ্যেও যে সঞ্চারিত হয়নি একথা না বললে সত্যের অপলাপ করা হবে । তাই দুর্গাপুরে পোস্টিং থাকার ...

প্রচ্ছদ ( অক্টোবর, ২০২০ )

  সকলের আশীর্বাদ এবং সহযোগিতাকে সঙ্গে নিয়ে প্রকাশিত হলো বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনীর উদ্যোগে পদচিহ্ন সাহিত্য পত্রিকা ( তারাশঙ্কর সাহিত্যসভার মুখপত্র )  ম্যাগাজিনটি পড়ার নিয়মাবলী - ১| সম্পূর্ণ ম্যাগাজিনটি পড়তে ক্লিক করুন বামদিকের উপরে থাকা " Home " সুইচ এ । তারপর আপনারা একটি একটি করে দেখতে পাবেন এবারের সংখ্যার পোস্ট গুলি । যে লেখাটি পড়তে চান " Read more " বাটনে ক্লিক করলে সবটা পড়তে পারবেন। ২|  পড়ার পর নিজের অভিজ্ঞতা জানান নিচে কমেন্ট বক্সে । আর " Share " বাটন এ ক্লিক করে লিংক কপি করে নিয়ে নিজের মত করে এই ম্যাগাজিনটি সবাইকে পড়তে সুযোগ করে দিন। ৩|      এই ম্যাগাজিনের সমস্ত পোস্টের কপিরাইট তারাশঙ্কর সাহিত্যসভা এবং লেখকের নামে রেজিস্টার্ড । বিনা অনুমতিতে এই ম্যাগাজিনের কোনো লেখা ব্যবহার বারন । ( Copyright act 2019-20 )        ধন্যবাদান্তে - ডঃ উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ( সম্পাদক , বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনী ) , সুনীল পাল ( সভাপতি , তারাশঙ্কর সাহিত্যসভা ) , অর্ঘ্য মুখার্জ্জী ( সম্পাদক, তারাশঙ্কর সাহিত্যসভা )