( পদচিহ্ন-এর প্রথম সংখ্যায় কলকাতায় তারাশঙ্করের ৫০তম জন্মদিন উদযাপনের একটি বিবরণ প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল যে কলকাতার সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তারাশঙ্করের সহপাঠী বন্ধু কবি কমলাকান্ত পাঠক স্বরচিত একটি কবিতা পাঠ করেছিলেন। কবিতাটি শুনে তারাশঙ্কর সহ অনেকের চোখেই জল এসে গিয়েছিল। এখানে সেই কবিতাটির পূর্ণপাঠ দেওয়া হলো। স্বভাবতই কবিতাটির কোন শিরোনাম ছিল না। এই শিরোনামটি আমার দেওয়া। -- সুনীল পাল। )
গুরু গরবের ধন আমাদের -- ওগো তারাশঙ্কর,
জন্মবর্ষ-স্মরণোৎসবে তব --
স্নেহ-শ্রদ্ধার চন্দনদ্রবে-মাখানো আমার প্রণতি তোমারে নিবেদি যুগ্মকর।
আমি আসিয়াছি -- গোকুলের দূত
শতধা-শীর্ণ বৃন্দারণ্য হতে --
আসিয়াছি আমি -- তব কৈশোর-লীলানিকেতন বনের বার্তা ব'য়ে ;
মনের কথাটি তার --
অঞ্চলে নিধি -- পঞ্চাশোর্ধ্বে ফিরিয়া পাইবে, -- বাসনা চমৎকার !
জানে, -- রাজা আসি রাখালিয়া-খেলা খেলিতে পারে না বনে,
কিন্তু বাধা কি বাসনা জাগিতে মনে !
আজি রাজসমারোহে --
পুত্রগরবে স্ফীতবক্ষের বিগলিত ক্ষীরধারে
বিরহের মধুবেদনার কালি মথিয়া যতনে জননী যশোদা তব
কাজর করিয়া পাঠায়ে দিয়েছে হেথা ;
বাসনার সাথে পূত স্নেহাশ্রু মিশায়ে দিয়েছে দই-হলুদের ফোঁটা --
বাৎসল্যের দুগ্ধবারিধি-মন্থনজাত নবনী দিয়েছে ধড়ার আঁচলে বাঁধি।
কহিয়া দিয়াছে মোরে --
ওরে, ব'লে দিস চুপি-চুপি কানে-কানে --
সভাকোলাহল থেমে যাবে যবে-- নিভে যাবে দীপমালা --
বসিবে যখন একাকী আপন ঘরে --
তখনি যেন সে আহীরিণী-মা'র ফল্গু এ উপায়ন
নিভৃতে গ্রহণ করে।
আমি আসিয়াছি -- গ্রাম্য আভীর --
যত রাখালের সখ্য করিয়া জমা --
বক্ষে এনেছি ব'য়ে, --
কানুর গরবে গরবিতদের মরমের প্রীতি শরমের পুটে ল'য়ে
আসিয়াছি দিতে আজি এ রাজোৎসবে।
দিতে সঙ্কোচ -- নিতেও লজ্জা -- এমনি এ উপায়ন,
তবু আনিয়াছি -- কোনমতে মানা মানে নি আহীরি-মন !
হে কীর্তিমান -- বক্ষ যে আজ দুলিছে গরবভারে --
'গৌরীকান্ত'-চরণাঙ্কিত পন্থাটি ঘিরে-ঘিরে
দেশের চিত্ত তীর্থ করিয়া ঘুরিছে বিভোর হিয়া ;
গোকুলই তীর্থ -- মধুপুরী শুধু মথুরানাথের রাজকাহিনীর স্নেহহীন ইতিহাস।
ওগো বরেণ্য, ওগো প্রণম্যতম,
অন্তরঙ্গ -- ওগো সোদর্যোপম,
অমরের পরমায়ুতে বরণ করিবারে তোমা পাঠালো 'তারা-মা' মোরে,
আশীর্বচন পাঠায়ে দিয়েছে সাথে --
বলেছে আমারে মা তার আশিস্ করিতে উচ্চারণ --
শশ্বজ্জীব -- কীর্তৌ জীব -- শান্তৌ জীব -- ওম্।
Comments
Post a Comment