Skip to main content

অনলাইন পরীক্ষা বনাম অনলাইন শপিং ©নন্দিতা মিশ্র

 আজ কৃষ্ণা নবমী, দেবীর বোধন... দেবীর আবাহন গীতি বেজে চলেছে দিক হতে দিগন্তে। মিমির বাড়িতে ঘটে মা দুর্গার অধিষ্ঠান হয়ে গেল আজই। প্রকৃতি আপন ছন্দে নিজের সাবলীল গতিতে চলেছে। এবার একটু অন্য রকম পুজো। মহালয়ার এক মাস চার দিন পর ষষ্ঠীর বোধনে ঢাকে কাঠি পড়বে। এবারে মলমাস পড়েছে তাই আশ্বিন মাসে পুজো হবে না।


 অন্যরকম অন্য ভাবেও... জগৎ জুড়ে বিপর্যয়। কোভিড পজিটিভের ঘটনা বাড়ছে প্রতিদিন। কাল ছিয়ানব্বই হাজার পজিটিভ কেস হয়েছে। বাইরে বের হওয়ার স্বাভাবিক গতি রদ হয়েছে সবার। মিমির এতদিনে দিল্লিতে থাকার কথা, এখন ঘরে বন্দি।

 আজ লকডাউন। সকাল থেকেই মিমি তাই বিছানা ছাড়েনি।  তাঁর মা এসে বার কয়েক ডাকল, কিন্তু সে যেন শুনতেই পায়নি। কাল রাতেই ইউ জি সি অক্টোবর মাসে পরীক্ষার আবেদন মেনে নিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে পরীক্ষা হয়, এ বিষয়ে গুচ্ছ নির্দেশিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরাফেরা করছে।

 চা টা খেয়েই মিমি ঠিক করে ফেলল, আজকেও দিনটা মুক্তির আস্বাদ নেবে। সারাদিন মোবাইলে কুটকুট করে গেল। মিমি মাকে জানতে চাইল, 'মা ! প্রশ্নের উত্তরগুলো কী এখনই রেডি করে রাখব ? না সেদিন প্রশ্ন পেয়েই করা যাবে।'

 'অবশ্যই নোট মেকিং করে রাখা ভালো', বললেন তিনি।

 ' নোট তো আমার রেডিই, মা! পরীক্ষা দেবার জন্য যে সব তৈরি করা আছে...'

 'তবু সব পড়ে রাখ' বলেই তিনি নিজের কাজের জগতে হারিয়ে গেলেন।

 সন্ধ্যে থেকে মিমির বন্ধুরা ফোন করল। ওপেন বুক টেস্ট... কেমন হবে পরীক্ষা, কতক্ষণ সময় নেবে এই বিষয়ে আলোচনা করেই চলেছে।

 'আসলে টেনশনটা সবাই ভাবছে পরীক্ষা দেবার, সেটা কিন্তু নয়। আমাদের যে প্রস্তুতি ছিলই এটা এখন আর কেউ দেখবে না'... মিমির গলাটা কানে এল।

 উল্টো দিকের মতামত শোনার অবকাশ নেই। কিন্তু মিমির টুকরো টুকরো কথা কানে আসতে থাকল, কীভাবে দেব, প্রশ্ন কেমন আসবে... বই খুলেও সে প্রশ্নের উত্তর দিতে কতটা সাবলীল হব সেটা বুঝতে পারছি না। আসলে আমাদের সমস্যাটা কেউ বুঝবে না।

 আমাদের সমাজ এই ওপেন বুক টেস্ট মেনে নিতেই পারছে না। যদিও বিদেশে এর প্রচলন বহু আগে থেকেই। মিমির কথাগুলো বাস্তব। এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা যদি হতো, আরো কত সমস্যা হতো। জীবনের দাম সবচেয়ে বেশি।


  পুজোর আগে পরীক্ষাটা শেষ হয়ে যাচ্ছে মিমির। সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা দেবার চাপটা নেমেছে আজ। দোকানে গিয়ে বাজারের চাপও এবার নেই, অনলাইনে পরীক্ষার মত, অনলাইনে বাজারও শুরু হয়েছে আজ থেকে।

 

 দিকে দিকে উদ্ভাসিত মাতৃবন্দনা। মা আসছেন... হোক দেরিতে, তবু তিনি আসছেন।

Comments

Popular posts from this blog

নজরুলের কবিতায় পুরাণ ও মিথ ঐতিহ্যের ব্যবহার (প্রসঙ্গ ঃ 'বিদ্রোহী') ----বিষ্ণুপদ চৌধুরী

 পুরাণ ও মিথকে আশ্রয় করে সাহিত্য সৃষ্টি শুধু বাংলা সাহিত্যেই নয়, সমগ্র বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে তা দৃষ্ট। বলা বাহুল্য,  সাহিত্যের অন্যান্য শাখার চাইতে কবিতাতেই এই পৌরাণিক অনুষঙ্গ ও মিথের ব্যবহার বেশি। বাংলা সাহিত্যও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলা কবিতার ক্ষেত্রেও আমরা দেখি পৌরাণিক নানান অনুষঙ্গকে কবিরা ব্যবহার করছেন।     আমরা আজ আলোচনা করব নজরুলের কবিতায় পুরাণ ও মিথ ঐতিহ্যের মেলবন্ধন কিভাবে তাঁর কবিতাকে সামগ্রিকতা দান করেছে। নজরুল তাঁর অনেক কবিতাতেই এই পৌরাণিক অনুষঙ্গ ও মিথকে এক নতুন ভাবে রূপদান করেছেন।  তিনি পুরাণের প্রাচীন ঐতিহ্যকে আধুনিক পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর কবিতায় স্থাপন করতে চেয়েছেন। বলা যেতে পারে,  পৌরাণিক অনুষঙ্গ ও মিথের ব্যবহার তাঁর কবিতায় অত্যন্ত সাবলীলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।  তিনি হিন্দু,  মুসলিম,  গ্রীক প্রভৃতি পুরাণ ও মিথ ঐতিহ্য কবিতায় এক নতুনভাবে ব্যবহার করেছেন। আমরা সেগুলোই এখন আলোচনা করে দেখে নেবো।        নজরুলের কবিতায় পুরাণ ও মিথ ঐতিহ্যের ব্যবহারকে আমরা কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করে নেবো। ১। ভারতীয় মিথ-পুরাণের ব্যবহার। ২। বা...

শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার কিছু স্মৃতি কথা : তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় স্মরণে - দীপান্বিতা মন্ডল

কবে থেকে যে সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখার অনুরাগী পাঠিকা হয়ে পড়েছিলাম আজ আর মনে পড়ে না । সেই কোন ছোট্টোবেলা থেকে বাপির মুখে ওঁর নাম অসংখ্যবার শুনেছি নানা কারনে । বাপিরও প্রিয় সাহিত্যিক ছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় - বাপির কাছেই প্রথম শুনেছিলাম " হাঁসুলি বাঁকের উপকথা"র কাহিনী । বাপিদের ছাত্রাবস্থায় ঐ উপন্যাস প্রকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গেই সারা বাংলায় কিভাবে তিনি আপামর বাঙালী পাঠকদের কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন শুনতাম সে গল্পও । রাঙামাটির রস রঙ রূপ গন্ধ বর্ণ , স্থানীয় খেটে খাওয়া মানুষদের অকৃত্রিম জীবনের ছবি এঁকে বাংলা সাহিত্যে যে নতুন মণিমানিক্যের ভান্ডারটি সৃষ্টি করলেন তার হদিস প্রথম পেয়েছিলাম বাপির কাছ থেকেই। গল্প শুনতাম যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় বাপিরা বন্ধুরা মিলে তাঁর টালা পার্কের বাড়ীতে ছুটির দিনে ছুটত নতুন গল্পের স্বাদ নিতে নয়ত তাঁর কোন গল্পের ওপর ভিত্তি করে উত্তম সুচিত্রার পরের ছবিটা হতে চলেছে তার কাহিনী শুনতে । তাঁর প্রতি এ হেন ভালোবাসাই পরবর্তীকালে আমার মধ্যেও যে সঞ্চারিত হয়নি একথা না বললে সত্যের অপলাপ করা হবে । তাই দুর্গাপুরে পোস্টিং থাকার ...

প্রচ্ছদ ( অক্টোবর, ২০২০ )

  সকলের আশীর্বাদ এবং সহযোগিতাকে সঙ্গে নিয়ে প্রকাশিত হলো বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনীর উদ্যোগে পদচিহ্ন সাহিত্য পত্রিকা ( তারাশঙ্কর সাহিত্যসভার মুখপত্র )  ম্যাগাজিনটি পড়ার নিয়মাবলী - ১| সম্পূর্ণ ম্যাগাজিনটি পড়তে ক্লিক করুন বামদিকের উপরে থাকা " Home " সুইচ এ । তারপর আপনারা একটি একটি করে দেখতে পাবেন এবারের সংখ্যার পোস্ট গুলি । যে লেখাটি পড়তে চান " Read more " বাটনে ক্লিক করলে সবটা পড়তে পারবেন। ২|  পড়ার পর নিজের অভিজ্ঞতা জানান নিচে কমেন্ট বক্সে । আর " Share " বাটন এ ক্লিক করে লিংক কপি করে নিয়ে নিজের মত করে এই ম্যাগাজিনটি সবাইকে পড়তে সুযোগ করে দিন। ৩|      এই ম্যাগাজিনের সমস্ত পোস্টের কপিরাইট তারাশঙ্কর সাহিত্যসভা এবং লেখকের নামে রেজিস্টার্ড । বিনা অনুমতিতে এই ম্যাগাজিনের কোনো লেখা ব্যবহার বারন । ( Copyright act 2019-20 )        ধন্যবাদান্তে - ডঃ উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ( সম্পাদক , বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনী ) , সুনীল পাল ( সভাপতি , তারাশঙ্কর সাহিত্যসভা ) , অর্ঘ্য মুখার্জ্জী ( সম্পাদক, তারাশঙ্কর সাহিত্যসভা )