আজ কৃষ্ণা নবমী, দেবীর বোধন... দেবীর আবাহন গীতি বেজে চলেছে দিক হতে দিগন্তে। মিমির বাড়িতে ঘটে মা দুর্গার অধিষ্ঠান হয়ে গেল আজই। প্রকৃতি আপন ছন্দে নিজের সাবলীল গতিতে চলেছে। এবার একটু অন্য রকম পুজো। মহালয়ার এক মাস চার দিন পর ষষ্ঠীর বোধনে ঢাকে কাঠি পড়বে। এবারে মলমাস পড়েছে তাই আশ্বিন মাসে পুজো হবে না।
অন্যরকম অন্য ভাবেও... জগৎ জুড়ে বিপর্যয়। কোভিড পজিটিভের ঘটনা বাড়ছে প্রতিদিন। কাল ছিয়ানব্বই হাজার পজিটিভ কেস হয়েছে। বাইরে বের হওয়ার স্বাভাবিক গতি রদ হয়েছে সবার। মিমির এতদিনে দিল্লিতে থাকার কথা, এখন ঘরে বন্দি।
আজ লকডাউন। সকাল থেকেই মিমি তাই বিছানা ছাড়েনি। তাঁর মা এসে বার কয়েক ডাকল, কিন্তু সে যেন শুনতেই পায়নি। কাল রাতেই ইউ জি সি অক্টোবর মাসে পরীক্ষার আবেদন মেনে নিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে পরীক্ষা হয়, এ বিষয়ে গুচ্ছ নির্দেশিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরাফেরা করছে।
চা টা খেয়েই মিমি ঠিক করে ফেলল, আজকেও দিনটা মুক্তির আস্বাদ নেবে। সারাদিন মোবাইলে কুটকুট করে গেল। মিমি মাকে জানতে চাইল, 'মা ! প্রশ্নের উত্তরগুলো কী এখনই রেডি করে রাখব ? না সেদিন প্রশ্ন পেয়েই করা যাবে।'
'অবশ্যই নোট মেকিং করে রাখা ভালো', বললেন তিনি।
' নোট তো আমার রেডিই, মা! পরীক্ষা দেবার জন্য যে সব তৈরি করা আছে...'
'তবু সব পড়ে রাখ' বলেই তিনি নিজের কাজের জগতে হারিয়ে গেলেন।
সন্ধ্যে থেকে মিমির বন্ধুরা ফোন করল। ওপেন বুক টেস্ট... কেমন হবে পরীক্ষা, কতক্ষণ সময় নেবে এই বিষয়ে আলোচনা করেই চলেছে।
'আসলে টেনশনটা সবাই ভাবছে পরীক্ষা দেবার, সেটা কিন্তু নয়। আমাদের যে প্রস্তুতি ছিলই এটা এখন আর কেউ দেখবে না'... মিমির গলাটা কানে এল।
উল্টো দিকের মতামত শোনার অবকাশ নেই। কিন্তু মিমির টুকরো টুকরো কথা কানে আসতে থাকল, কীভাবে দেব, প্রশ্ন কেমন আসবে... বই খুলেও সে প্রশ্নের উত্তর দিতে কতটা সাবলীল হব সেটা বুঝতে পারছি না। আসলে আমাদের সমস্যাটা কেউ বুঝবে না।
আমাদের সমাজ এই ওপেন বুক টেস্ট মেনে নিতেই পারছে না। যদিও বিদেশে এর প্রচলন বহু আগে থেকেই। মিমির কথাগুলো বাস্তব। এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা যদি হতো, আরো কত সমস্যা হতো। জীবনের দাম সবচেয়ে বেশি।
পুজোর আগে পরীক্ষাটা শেষ হয়ে যাচ্ছে মিমির। সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা দেবার চাপটা নেমেছে আজ। দোকানে গিয়ে বাজারের চাপও এবার নেই, অনলাইনে পরীক্ষার মত, অনলাইনে বাজারও শুরু হয়েছে আজ থেকে।
দিকে দিকে উদ্ভাসিত মাতৃবন্দনা। মা আসছেন... হোক দেরিতে, তবু তিনি আসছেন।
Comments
Post a Comment