Skip to main content

হাসি-অশ্রু মাখা একটি জন্মদিনের কথা - সুনীল পাল

এ বছর লাভপুরে তারাশঙ্করের জন্মদিন জনসমাগমহীনভাবে অনলাইনে উদযাপন করতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। ইচ্ছে ছিল এই উপলক্ষে লাভপুরে 'তারাশঙ্কর প্রণাম'-এর একটি ধারাবাহিক বিবরণ দেবো। কিন্তু সময় সংক্ষেপের কারণে সে ইচ্ছে আপাতত স্থগিত রাখতে হচ্ছে। আমরা বরং দৃষ্টি দিই তারাশঙ্করের বিশেষ একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠানের দিকে। 
সেবার, ১৩৫৪ সালের ৮ই শ্রাবণ তারাশঙ্কর ঊনপঞ্চাশ বছর পূর্ণ করে পঞ্চাশে পা দিয়েছেন। সেই উপলক্ষে ১০ শ্রাবণ রবিবার কলকাতার নিউ শ্যামবাজার স্ট্রিটের কে বি ক্লাব প্রাঙ্গণে তাঁর পঞ্চাশতম জন্মোৎসব পালন করা হল। তাঁর পরিবারের লোকজন ছাড়াও সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলার বহু সাহিত্যিক। সজনীকান্ত দাসের নেতৃত্বে তাঁরাই আয়োজন করেছিলেন এ অনুষ্ঠানের।
অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল সুকৃতি সেন রচিত ও সুরারোপিত এবং তাঁরই গাওয়া একটি উদ্বোধনী সংগীত দিয়ে -- "ভালবাসা দিয়ে বরি বন্ধুরে, প্রেমের গর্বে লই যে নাম, / প্রতিভাদীপ্ত মধ্য-আকাশে ঘাসের ফুলের লও প্রণাম।" সেদিন যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, কবিতায়, বক্তৃতায় তারাশঙ্করকে সংবর্ধনা জানিয়েছিলেন তাঁরা হলেন প্রেমাঙ্কুর আতর্থী,বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবোধকুমার সান্যাল, মনোজ বসু, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, অমল হোম, গজেন্দ্রকুমার মিত্র, যোগেশ ভট্টাচার্য, বাসন্তী রায় এবংবীরভূমের হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় ও কমলাকান্ত পাঠক। আর প্রশস্তিপত্র পাঠিয়েছিলেন কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়, কালিদাস রায় (কবিতা), মোহিতলাল মজুমদার, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, বনফুল (কবিতা ), বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়, প্রমথনাথ বিশী, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। প্রশস্তিপত্রগুলি পাঠ করেছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।  তারাশঙ্কর তাঁর অভিভাষণে সেদিন নিজের জীবনের অনেক কথা বলেছিলেন।
উদ্বোধনী সঙ্গীতের একটি প্যারডি রচনা করেছিলেন নলিনীকান্ত সরকার। সবশেষে সেটি গেয়ে মধুরেণ সমাপয়েৎ করেছিলেন। গানটি ছিল --
গর্ব তোমার কোথায় বন্ধু, খর্ব হতেছে তোমার নাম।
মাথা কাটা গেছে, ঠ্যাং কাটা গেল -- কোথায় আশিস কোথা প্রণাম ?
আপনার হাতে ধরি তরবার
শ্রী-সম্পদ তব করেছ সাবাড়,
সম্প্রতি কাটা বাঁড়ুজ্জেটাও -- বড় শোচনীয় এ পরিণাম।
যেটুকু রয়েছে সেটুকুই নিয়ে পাবলিশারেরা চকিত-চোখ,
তব 'কালিন্দী' 'ধাত্রীদেবতা'-কল্যাণে তারা বিগতশোক।
সকলে মিলিয়া করিছে দোহন
সজনী, গজেন, মনোজমোহন,
তুমি কামধেনু ভরাইছ কেঁড়ে পাথার করিয়া মাথার ঘাম।
এ প্যারডি থেকে বোঝা যায় তারাশঙ্কর ততদিনে নাম থেকে 'শ্রী' বর্জন করেছেন এবং ক্রমশ বিখ্যাত হয়ে উঠছেন। শুধু তারাশঙ্কর বললেই চিনছে লোকে, 'বাঁড়ুজ্জ্যে' বা বন্দ্যোপাধ্যায় বলার তত প্রয়োজন হচ্ছে না।  
সেদিনের অনুষ্ঠানের শেষে নলিনীকান্ত সরকার যেমন তাঁর এই প‍্যারডি দিয়ে হাসি ফুটিয়েছিলেন সবার মুখে, তেমনি তার আগে তারাশঙ্করের সহপাঠী বন্ধু কমলাকান্ত পাঠকের স্বরচিত দীর্ঘ কবিতাপাঠ শুনে অশ্রুস্নাত হয়ে উঠেছিল অনেকের চোখ। কমলাকান্তের সে কবিতার ভাববস্তু ছিল -- রাখালরাজ শ্রীকৃষ্ণ তাঁর কৈশোরের ক্রীড়াভূমি বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরায় গিয়ে প্রতিষ্ঠালাভ করেছেন। কমলাকান্ত তাই একজন গোপবালকের মতো বৃন্দারণ‍্যের সংবাদ নিয়ে তাদের গর্বের ধন কৃষ্ণের এই রাজোৎসবে যোগ দিতে এসেছেন। সঙ্গে এনেছেন যশোদামায়ের (লাভপুরের) একটি ক্ষুদ্র উপহার এবং তারামায়ের আশীর্বাদ।
তারাশঙ্কর-পুত্র সরিৎবাবু লিখেছেন, "এই কবিতা সকলের চোখকে অশ্রুসজল করে তুলেছিল। বাবার দু গাল বেয়ে নেমেছিল শীর্ণধারা।" 
ইচ্ছা র‌ইলো বারান্তরে কমলাকান্ত পাঠকের সেই কবিতাটি সম্পূর্ণ প্রকাশ করার।
                            -- ০ --

Comments

Popular posts from this blog

নজরুলের কবিতায় পুরাণ ও মিথ ঐতিহ্যের ব্যবহার (প্রসঙ্গ ঃ 'বিদ্রোহী') ----বিষ্ণুপদ চৌধুরী

 পুরাণ ও মিথকে আশ্রয় করে সাহিত্য সৃষ্টি শুধু বাংলা সাহিত্যেই নয়, সমগ্র বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে তা দৃষ্ট। বলা বাহুল্য,  সাহিত্যের অন্যান্য শাখার চাইতে কবিতাতেই এই পৌরাণিক অনুষঙ্গ ও মিথের ব্যবহার বেশি। বাংলা সাহিত্যও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলা কবিতার ক্ষেত্রেও আমরা দেখি পৌরাণিক নানান অনুষঙ্গকে কবিরা ব্যবহার করছেন।     আমরা আজ আলোচনা করব নজরুলের কবিতায় পুরাণ ও মিথ ঐতিহ্যের মেলবন্ধন কিভাবে তাঁর কবিতাকে সামগ্রিকতা দান করেছে। নজরুল তাঁর অনেক কবিতাতেই এই পৌরাণিক অনুষঙ্গ ও মিথকে এক নতুন ভাবে রূপদান করেছেন।  তিনি পুরাণের প্রাচীন ঐতিহ্যকে আধুনিক পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর কবিতায় স্থাপন করতে চেয়েছেন। বলা যেতে পারে,  পৌরাণিক অনুষঙ্গ ও মিথের ব্যবহার তাঁর কবিতায় অত্যন্ত সাবলীলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।  তিনি হিন্দু,  মুসলিম,  গ্রীক প্রভৃতি পুরাণ ও মিথ ঐতিহ্য কবিতায় এক নতুনভাবে ব্যবহার করেছেন। আমরা সেগুলোই এখন আলোচনা করে দেখে নেবো।        নজরুলের কবিতায় পুরাণ ও মিথ ঐতিহ্যের ব্যবহারকে আমরা কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করে নেবো। ১। ভারতীয় মিথ-পুরাণের ব্যবহার। ২। বা...

শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার কিছু স্মৃতি কথা : তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় স্মরণে - দীপান্বিতা মন্ডল

কবে থেকে যে সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখার অনুরাগী পাঠিকা হয়ে পড়েছিলাম আজ আর মনে পড়ে না । সেই কোন ছোট্টোবেলা থেকে বাপির মুখে ওঁর নাম অসংখ্যবার শুনেছি নানা কারনে । বাপিরও প্রিয় সাহিত্যিক ছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় - বাপির কাছেই প্রথম শুনেছিলাম " হাঁসুলি বাঁকের উপকথা"র কাহিনী । বাপিদের ছাত্রাবস্থায় ঐ উপন্যাস প্রকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গেই সারা বাংলায় কিভাবে তিনি আপামর বাঙালী পাঠকদের কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন শুনতাম সে গল্পও । রাঙামাটির রস রঙ রূপ গন্ধ বর্ণ , স্থানীয় খেটে খাওয়া মানুষদের অকৃত্রিম জীবনের ছবি এঁকে বাংলা সাহিত্যে যে নতুন মণিমানিক্যের ভান্ডারটি সৃষ্টি করলেন তার হদিস প্রথম পেয়েছিলাম বাপির কাছ থেকেই। গল্প শুনতাম যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় বাপিরা বন্ধুরা মিলে তাঁর টালা পার্কের বাড়ীতে ছুটির দিনে ছুটত নতুন গল্পের স্বাদ নিতে নয়ত তাঁর কোন গল্পের ওপর ভিত্তি করে উত্তম সুচিত্রার পরের ছবিটা হতে চলেছে তার কাহিনী শুনতে । তাঁর প্রতি এ হেন ভালোবাসাই পরবর্তীকালে আমার মধ্যেও যে সঞ্চারিত হয়নি একথা না বললে সত্যের অপলাপ করা হবে । তাই দুর্গাপুরে পোস্টিং থাকার ...

প্রচ্ছদ ( অক্টোবর, ২০২০ )

  সকলের আশীর্বাদ এবং সহযোগিতাকে সঙ্গে নিয়ে প্রকাশিত হলো বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনীর উদ্যোগে পদচিহ্ন সাহিত্য পত্রিকা ( তারাশঙ্কর সাহিত্যসভার মুখপত্র )  ম্যাগাজিনটি পড়ার নিয়মাবলী - ১| সম্পূর্ণ ম্যাগাজিনটি পড়তে ক্লিক করুন বামদিকের উপরে থাকা " Home " সুইচ এ । তারপর আপনারা একটি একটি করে দেখতে পাবেন এবারের সংখ্যার পোস্ট গুলি । যে লেখাটি পড়তে চান " Read more " বাটনে ক্লিক করলে সবটা পড়তে পারবেন। ২|  পড়ার পর নিজের অভিজ্ঞতা জানান নিচে কমেন্ট বক্সে । আর " Share " বাটন এ ক্লিক করে লিংক কপি করে নিয়ে নিজের মত করে এই ম্যাগাজিনটি সবাইকে পড়তে সুযোগ করে দিন। ৩|      এই ম্যাগাজিনের সমস্ত পোস্টের কপিরাইট তারাশঙ্কর সাহিত্যসভা এবং লেখকের নামে রেজিস্টার্ড । বিনা অনুমতিতে এই ম্যাগাজিনের কোনো লেখা ব্যবহার বারন । ( Copyright act 2019-20 )        ধন্যবাদান্তে - ডঃ উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ( সম্পাদক , বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনী ) , সুনীল পাল ( সভাপতি , তারাশঙ্কর সাহিত্যসভা ) , অর্ঘ্য মুখার্জ্জী ( সম্পাদক, তারাশঙ্কর সাহিত্যসভা )